
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাত ও আরাকান আর্মির নির্যাতনের মুখে গত দেড় বছরে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ২০১৭ সালের পর এটিই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা।
অভিযোগ উঠেছে, এবার রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৩৫ হাজার টাকা আদায় করে সীমান্ত পার করে দিচ্ছে আরাকান আর্মি। টাকা দিতে না পারলে বিশেষ করে তরুণদের ধরে নিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং বিদ্রোহী যুদ্ধে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
সম্প্রতি রাখাইনের বুশিডংয়ের শ্যালাপ্রাং গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা নুরজাহান (৪৫) জানান, আরাকান আর্মি তাদের এলাকা ছেড়ে যেতে বলেছে এবং যেতে হলে জনপ্রতি ১২ লাখ কিয়েট (প্রায় ৩৫ হাজার টাকা) দিতে হবে।
তিনি আরও জানান, যারা টাকা দিতে পারেনি, বিশেষ করে তরুণরা, তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যুদ্ধের জন্য।
রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা মো. সেলিম (ছদ্মনাম) জানান, আরাকান আর্মি তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা পেয়ে ছেড়ে দিলেও কিছুদিন পর আবার ধরে নিয়ে ১৭ দিন আটকে রেখে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়। যুদ্ধে যেতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়। পরে সুযোগ বুঝে তিনি পালিয়ে আসেন।
বাংলাদেশের সিতওয়েতে সাবেক কনসাল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পারাপারে আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতা রাখাইনের জটিল পরিস্থিতি নির্দেশ করে। এর প্রভাব বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও পড়তে পারে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, প্রায় আট বছর ধরে একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা আসায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধ, মাদক ও চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগও বাড়ছে।
টেকনাফ ২-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, সীমান্তে সতর্কতা জারি রয়েছে এবং অনেক অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা হয়েছে। তবে রাখাইনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গারা যে গণহত্যার শিকার, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই এবং সব ক্যাম্প সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, রাখাইনে যুদ্ধ, আরাকান আর্মির দমন-পীড়ন ও সীমান্ত খুলে দেওয়ার ঘোষণা- সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাদের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কেবল আন্তর্জাতিক চাপেই সম্ভব। সুত্র, বিডিটোয়েন্টিফোর লাইভ ডটকম
পাঠকের মতামত